এনপিনিউজ৭১/ডেস্ক রিপোর্ট/ ২১মে
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ব্যাস প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জানিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগতে পারে। এর প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানায়, বিশাল ব্যাপ্তির এ ঝড় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে এবং ততক্ষণে এর অগ্রভাগ পৌঁছে যায় কলকাতায়।
গত ১৬ মে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া আম্পান এক পর্যায়ে শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছিল। বঙ্গোপসাগরের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন এটি। তবে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে আসতে কিছুটা শক্তি হারিয়ে তা আবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঝড় পশ্চিমবঙ্গের দিঘার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে। সে সময় এর অবস্থান ছিল ভারতের সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫ কিলোমিটার, দিঘা থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে।ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।
আম্পানের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। মধ্যরাতের পর বৃষ্টির বেগ বাড়তে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে বাড়ে বাতাসের জোর। সেই সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতে নদীর পানিও বাড়তে শুরু করে।
আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ঝড়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ উপকূলে ঢুকে পড়ার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুরু হয় প্রবল ঝড়ো বাতাসের দাপট। ঝড় এগিয়ে আসতে থাকায় মঙ্গলবার থেকেই দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
ঝড় উপকূলে আঘাত হানার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বুধবার দুপুরে জানান, সব মিলিয়ে ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জনকে ১৪ হাজার ৩৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে এ ঝড় এসেছে বলে সংক্রমণ এড়াতে আশ্রয় কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে থাকার এবং স্বাস্থবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বলছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত দু’জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন গাছ চাপা পড়ে এবং অন্যজন বিদু্যতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় প্রাণ হারিয়েছেন।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিমি বেগে ঝড় বইছে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি তীব্র গতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করছে। রাজ্যে ঝড়ো হাওয়া আরও দুই-তিন ঘণ্টা ধরে চলমান থাকবে।
জি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝড়ের তান্ডবে কার্যত লন্ডভন্ড দশা এখন দিঘার। কলকাতার একাধিক জায়গায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদু্যতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট গাছপালা উপড়ে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫ শতাধিক বাড়িঘরে পানি। ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূল ভাগে আসার আগেই ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে নোয়াখালীতে ‘অস্বাভাবিক জোয়ারে’ বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।
এছাড়া কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি এসেছে। বুধবার দুপুরের দিকে জেলার হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর, নিঝুম দ্বীপ ও সোনাদিয়া ইউনিয়নে এই ক্ষয়ক্ষতির খবর জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
চরঈশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাশেদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভেতরে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। তবে লোকজনকে আগেই সরিয়ে নেওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন বলেন, তার ইউনিয়নে অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকলয়ে পানি ঢুকেছে। এতে অনেক বাড়িঘর ও রাস্তঘাট তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামও তার ইউনিয়নে ‘অস্বাভাবিক জোয়ারে’ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর দিয়েছেন।