শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী ২২ সেপ্টেম্বর
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে কলাহাটিতে সার্জারী বিশেষজ্ঞ না হয়েও এক ভুয়া ডাক্তার মোঃ ফিরোজ আলম সার্জারী অপারেশন করছে । তার ভুল চিকিৎসায় প্রানহানীর শঙ্কায় মাদ্রাসা ছাত্র।
জানা যায়, বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের বিমানবন্দর পশ্চিমপাড়ার মোজাহারুলের পুত্র কওমি মাদ্রাসা ছাত্র মোঃ মোরসালিন (১৯) গত ১১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিছানায় শোয়ার সময় ডান হাতের কবজির নিচে মাংসপেশীতে সুঁই ঢুকে ভেঙ্গে যায় । বাসায় চেষ্টার পরও ভেঙ্গে যাওয়া সুঁই বের করা সম্ভব না হলে ওই দিনেই তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুরে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন । রাত হওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে জনৈক্য লোকের পরামর্শে শহরের পাঁচমাথা মোড় কলাহাটির সালাম মার্কেটের ডাঃ মাসুম চিকিৎসালয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে ডাঃ মাসুমের পুত্র ভুয়া ডাক্তার ফিরোজ আলম অল্প টাকা খরচের প্রলোভন দেখিয়ে ভাঙ্গা সুঁই বের করার জন্য চেম্বারেই অস্ত্রপচার চালান। অনেক কাটাছেড়া করার পরও ভাঙ্গা সুঁই বের করতে পারেন নি । কৌশল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ক্যানুলা সুঁইয়ের ভাঙ্গা অংশ এনে রোগীর পরিবারের লোকজনদের হাতে তুলে দেন।
তিনি বলেন, হাত থেকে সুঁই বের করা হয়েছে, চিন্তার কোন কারন নাই। পরিবারের লোকজনদের সন্দেহ হলে তাকে বারবার জানান হয়, এটি সুঁইয়ের ভাঙ্গা অংশ নয়। সকলের কথা উপেক্ষা করে তিনি বলেন, এটাই সুঁইয়ের ভাঙ্গা অংশ আর সুঁই হাতে থাকলেও ড্রেসিংয়ের সময় বের হয়ে যাবে । এরপর কাটাছেড়া অংশ সেলাই করে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে রোগিকে বিদায় দেন।
পরবর্তীতে হাতে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলে এক্সেরে রিপোর্ট করার জন্য রংপুরের সিটি ল্যাব এন্ড কনসাল্টেশন সেন্টারে নিয়া যাওয়া হয় । পরে এক্সরে রিপোর্টে হাতের মাংসপেশীতে ভাঙ্গা সুঁইয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তাকে রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পুনরায় অস্ত্রপচার করে ভাঙ্গা সুঁই বের করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা সৈয়দপুরের ঐ ভুয়া চিকিৎসকের ব্যর্থতার কথা জানান এবং মৌখিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে মোরসালিনের পরিবারের লোকজন গত শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডাঃ মাসুম চিকিৎসালয়ে যান। সেখানে তারা ভুল চিকিৎসা ও মোরসালিনের জীবনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানান । একপর্যায়ে রোগীর পরিবারের লোকজনদের সাথে ভুয়া ডাক্তার ও তার অনুসারীদের মধ্যে বাক বিতন্ডা শুরু হয় । ঘটনাটি জানাজানি হলে উপস্থিত লোকজন ভুল চিকিৎসার জন্য ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তুলেন ।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে স্থানীয় কাউন্সিলর হায়দার কাজী, কলাহাটির আড়ৎদার হাজী মোজাম্মেল হক ও জনৈক্য পিটু বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উভয়পক্ষকে আড়তে বসান । বহিরাগতদের বের করে দিয়ে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন ।
বৈঠকে বিচারক হাজী মোজাম্মেল হক ভুয়া চিকিৎসককে উদ্দেশ্যে করে বলেন, তুমি কিভাবে সার্জারী অপারেশন করলে । সুঁই ভিতরে রেখে কেন তুমি সেলাই করে তাদের বিদায় দিলে । অতঃপর ভুয়া চিকিৎসককে ৬ হাজার টাকা রোগীর পরিবারকে প্রদানের সিদ্ধান্ত দেন ।
রোগীর বড় ভাই সবুজ জানান, রংপুরে আমাদের চিকিৎসা করাতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।বিচারকরা কি করে একজন ভুয়া চিকিৎসকে মাত্র ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন।
উল্লেখ্য, সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড় কলাহাটির সালাম মার্কেটের ডাঃ মাসুম চিকিৎসালয়ে ভুয়া ডাক্তার মোঃ ফিরোজ আলম দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন । সার্জারী বিশেষজ্ঞ না হয়েও অনেক রোগীর ভুল অপারেশনে করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন থেকে সার্জারী বিশেষজ্ঞ না হয়েও অপারেশন করছেন। ডাঃ মাসুম চিকিৎসালয় থেকে মোঃ ফিরোজ আলমের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে দেখা যায় কার্ডে তিনি নিজেকে মানবাধিকার কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন । কোন ধরণের চিকিৎসা শাস্ত্রের ডিগ্রী ও রেজিষ্ট্রেশনের উল্লেখ করেন নাই।
পরবর্তীতে মোবাইলের মাধ্যমে ভুয়া ডাক্তার ফিরোজ আলমের কাছে চিকিৎসা বিষয়ে কোথায় পড়াশোনা করেছেন? জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠানের নামও বলতে পারেননি। এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন সচেতন মহল।