মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

খবরের শিরোনাম :
প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদের ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নিয়েছেন মার্কিট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন: পররাষ্ট্র মন্ত্রী। লালমনিরহাটে এক সাথে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক গৃহবধূ। পীরগাছায় হাসুয়ার কোপে খালুর মাথা বিচ্ছিন্ন করল ভাগনে! প্রথমে মোবাইলে প্রেম, পালিয়ে এসে দেখেন প্রেমিক দৃষ্টিহীন,অতপর রংপুরে তাজহাট থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৩ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার রংপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের অভিযান ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দাম কমলে ডিম সেদ্ধ করে ফ্রিজে রাখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী যে দলে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিলেন হিরো আলম সংবাদ সম্মেলনে মেয়রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালো রসিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রংপুর মহানগর জাতীয় যুব সংহতির বিক্ষোভ মিছিল
ফুটবল প্রশিক্ষণ নিতে পর্তুগাল-ব্রাজিল যাচ্ছে ওরা

ফুটবল প্রশিক্ষণ নিতে পর্তুগাল-ব্রাজিল যাচ্ছে ওরা

নিউজ ডেক্সঃ

রংপুর সদর উপজেলার ৪ নারী ফুটবলার ইউরোপের দেশ পর্তুগালে যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছেন। এ ছাড়া জেলার পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমি থেকে একজন তরুণ ফুটবলারও যাচ্ছেন পেলে-নেইমারের দেশ ব্রাজিলে। তাদের সবাইকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ইউরোপ-আমেরিকার দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিদপ্তর।  

সোমবার (৪ এপ্রিল) বালক ও বালিকা বিভাগে মনোনীত খেলোয়াড়দের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকায় বাজিমাত করেছে রংপুরের ফুটবলাররা।

প্রশিক্ষণের জন্য দুটি দলে ১১ বালক এবং ১১ বালিকা ফুটবলার (অনূর্ধ্ব-১৭) মনোনীত হয়েছেন। প্রকাশিত তালিকায় নাছরিন আক্তার, মৌরাশি আক্তার, শাম্মি আক্তার ও রেখা আক্তারের নাম রয়েছে। এরা সবাই সদর উপজেলার পালিচড়া গ্রামের সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলার। এ ছাড়া বালকদের (অনূর্ধ্ব-১৭) দলে রয়েছে পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির মেধাবী ফুটবলার লিয়ন প্রধান।

জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গত বছর অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট (বালক, অনূর্ধ্ব-১৭) ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (বালিকা, অনূর্ধ্ব-১৭) খেলায় ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৫ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে।

সেখান থেকে বাছাই করা প্রতিভাবান ৮০ জন বালক ও বালিকা খেলোয়াড়কে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে বিকেএসপিতে ২ মাস নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন ক্রীড়া পরিদপ্তর। বর্তমানে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৮০ জনের মধ্য থেকে ১১ জনের বালক দলটি ব্রাজিলে এবং বালিকাদের ১১ জনের দলটির পর্তুগাল যাওয়ার কথা রয়েছে। তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে পাঠানো হবে।

সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়রের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল জানান, প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ৪ জন ছেলে খেলোয়াড়কে ব্রাজিলে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ বছর ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও পাঠানো হবে। তবে এবার শুধু ৪ জন নয়, ছেলে-মেয়েদের পুরো ১১ জনের একটি করে টিম পাঠানো হবে।

এদিকে সদ্যপুস্কুরিনী ইউনিয়নের চার নারী ফুটবলার বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হওয়ায় আনন্দে দিশেহারা গ্রামবাসী। নারী ফুটবলের গ্রামখ্যাত এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, সদ্যপুস্কুরিনীর মেয়েরা ফুটবলে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতেও অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে। সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাব বাংলাদেশ নারী লীগে খেলেছে। পর্তুগালে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টিও আরেকটি বড় সাফল্য।

শিলা আক্তারের বাবা গোলজার হোসেন ভীষণ আনন্দিত। অশ্রুসিক্ত চোখে এই অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে জায়গা পেয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি যে কী খুশি, তা বলে বোঝাতে পারব না।

আরেক অভিভাবক রেজ্জাক আলী বলেন, মুই বিশ্বাস করব্যার পারোছো না, মোর বেটি ঢাকাত খেলবার গেইছে। ফির স্যাটে থাকি বিদেশোতও যাবার সুযোগ পাইছে। গ্রামোত ক্লাব না থাকলে এত কিছু হইল না হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবু তৈয়ব আরিফের পৃষ্টপোষকতায় সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের চিত্র পাল্টে গেছে। ক্লাবটি ২০২০ সাল থেকে আলোর মুখ দেখা শুরু করে।

শুধু তাই নয়, বিপ্লব কুমার সরকার দুই নারী ফুটবলার নাছরিন আক্তার ও রুমি আক্তারকে লিগামেন্ট অপারেশন (পায়ের অস্ত্রোপচার) করিয়ে খেলোয়াড় জীবন পুনরায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন সেই নাছরিনসহ চার ফুটবলার ইউরোপীয় দেশ পাড়ি দেবার অপেক্ষায়।

সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও ফুটবল প্রশিক্ষক মিলন মিয়া বলেন, আমাদের সফলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য এই ক্লাবের মাধ্যমে দেশে ভালমানের খেলোয়াড় তৈরিতে ভূমিকা রাখা। সেই চেষ্টা নিয়েই দীর্ঘদিন গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসক সবসময় খোঁজখবর রাখেন। জেলা পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করছে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু স্পন্সরের অভাবে বাস্তবায়ন করাটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে সদ্যপুস্কুরিনীর চার নারী ফুটবলার ছাড়াও জেলার পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির লিয়ন প্রধানও আগামী মে মাসে দুই মাসের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ব্রাজিল যাবেন। লিয়ন বিকেএসপির শিক্ষার্থী। তিনি পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা খাদিজা বেগম।

পীরগঞ্জ পৌর এলাকার ধনশালা গ্রামে থাকেন লিয়নের পরিবার। দিনমজুর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, থাকার জায়গাটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জমিজমা নেই। সংসারের খরচ চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করি। আমার দুই ছেলে-মেয়ে। তাদের কোনো ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারিনি। ছেলেটা একটা বাইসাইকেল কিনে চেয়েছিল। কিন্তু অভাবের কারণে সেটাও দিতে পারিনি। পায়ে হেঁটেই কষ্ট করে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে। ওর লেখাপড়ার খরচ কষ্ট করে চালাচ্ছি। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা এই ছেলে ফুটবল খেলার জন্য বিদেশে (ব্রাজিল) যাচ্ছে। এটা শোনার পর আনন্দে বুক ভরে গেছে।

পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশিক্ষক মাহমুদুল হাসান সোহেল বলেন। ফুটবল খেলাকে ধরে রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের একাডেমির ক্ষুদে খেলোয়াড়দের লিয়ন বিকেএসপিতেও ভর্তি হয়েছে। সে ভীষণ ভালো খেলে, বিশেষ করে
ফরোয়ার্ড পজিশনে দুর্দান্ত। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ব্রাজিলে যাচ্ছে শুনে বেশ ভালো লাগছে। আমাদের এখন একটাই চাওয়া, লিয়ন যেন জাতীয় পর্যায়ে জায়গা করে নিয়ে দেশের মুখ উজ্জল করতে পারে।

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

© ২০২০-২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | এনপিনিউজ৭১.কম
Developed BY Rafi It Solution