নিউজ ডেক্সঃ
রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় এগিয়ে নারীরা। গত ৫ মাসে সিটি করপোরেশন এর ৩৩টি ওয়ার্ডে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ৩০০টি। পুরুষের চেয়ে নারীরাই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন বেশি। এই সময়ের মধ্যে ১৮০ জন নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করেছে। এছাড়া ১২০ জন পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, এক বছরে প্রায় ৫ শতাধিক বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২২ মে পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের প্রায় সব কয়টি ওয়ার্ডেই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এ সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে ৫ মাসে ৩০০ বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য অনুযায়ী প্রতিমাসে গড়ে ৬০টির মত বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে দু’টি করে তালাক হচ্ছে। মিমাংসার আবেদন পরলেও প্রায় সবগুলো আবেদনেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। এই সময়ের মধ্যে ১৮০ জন নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করেছে। এছাড়া ১২০ জন পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনাকালীন এই দুই বছরে বেশি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই এর কারন হিসেবে আর্থিক অনটন, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মতের বনিবনা না হওয়া, স্বামীর মাদকাসক্তি, যৌতুকের কারণে নির্যাতন, পরকীয়াসহ বিভিন্ন কারণে নারীরা স্বামীকে তালাক দিচ্ছেন। এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছে শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের মধ্যে। যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং স্বামীর পরনারীতে আসক্তি, সাংসারিক চাহিদা পুরণ না হওয়াসহ ইত্যাদি কারণে নারীদের মাঝে বিচ্ছেদের প্রবণতা প্রতিদিনই বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে নারীদের সংসারের প্রতি অমনোযোগী, ফেসবুকে বেশি সময় ব্যয় এবং অন্য পুরুষে আসক্তির কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ করছেন পুরুষরা। বিবাহ বিচ্ছেদের পর দ্রুত পুরুষরা বিবাহ করলেও বিচ্ছেদের পরে অনেক নারী একাকীত্ব জীবন যাপন করছেন।
বিবাহ বিচ্ছেদ সমাজ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যারা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছেন তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই একা থাকছেন এবং একাকীত্ব অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
সম্প্রতি বিচ্ছেদ হওয়া স্বপ্না (ছদ্ধ নাম) নামের এক নারী জানান, বিয়ের পর থেকেই স্বামী বেকার, সেই সাথে মাদকাসক্ত। যৌতুকের টাকা দেয়া হলেও প্রায় সময় আবারও টাকা নিয়ে আসার চাপ দিতে থাকে। এসব কারনে ডিভোর্স দেই। এখন বাবার বাসায় আছি। এখন একা আছি ভালো আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক নারী জানান, স্বামী অক্ষম। ১০ বছর হলো বিয়ের। সন্তানের মুখ দেখা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কথায় কথায় সন্দেহ করতেন এ নিয়ে সংসারে প্রায় অশান্তি লেগে থাকতো। তাই বাধ্য হয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে শরিফুল ইসলাম নামে বিচ্ছেদ হওয়া এক পুরুষ জানায়, বিয়ের পর থেকেই কেন জানি বনাবনি হচ্ছিল না, অর্থবিত্তের অভাব না থাকলেও শান্তি ছিল না সংসারে তাই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অপর এক পুরুষ জানান, প্রায় ২০ বছরের সংসার জীবন। দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিলো সংসার কিন্তু এই বয়সে এসে স্ত্রী অন্য এক পুরুষের সাথে সম্পর্কে জরিয়েছেতাই বাধ্য হয়ে বিচ্ছেদ করেছেন। এখন মেয়েরা তার সাথেই রয়েছেন।
রংপুর জজকোর্টের আইনজীবী আতিক উল আলম কল্লোল বলেন, তালাকের জন্য প্রথমে নোটিশ প্রদান করতে হয়। এর পর সালিস এর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন পড়ে। সব শেষ ৯০ দিন অতিবাহিত হবার পরে তালাকের সার্টিফিকেট একজন রেজিস্টার্ড নিকাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।
রসিক ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মাওলানা আব্দুস সোবহান জানান, তালাক হচ্ছে একমাত্র আইনগত পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। নানা কারণে তালাকের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে।
রসিক ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুনুর রশীদ মানিক জানান, প্রতিদিন কোন না কোন পারিবারিক বিচার শালিস লেগেই আছে। সংসারের নানা রকম সমস্যা নিয়ে। তবে কোন পক্ষই আপোষ করছেন না। আপোষের সংখ্যা নাই বললেই চলে।
এসব কারনে তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যার কারনে সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাইম উল হক ঢাকা মেইলকে জানান, প্রতি মাসেই ৬০ থেকে ৭০টি তালাক কার্যকরের চিঠি আসছে। গত ৫ মাসে সিটি কর্পোরেশনে ৩০০ তালাক কার্যকর হয়েছে।