রংপুরের পাগলাপীরে গুড়ের সঙ্গে নিম্নমানের মিষ্টির সিড়া ও রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল গুড়। এক শ্রেণির অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারী সেন্টিগেট পাগলাপীরে সুস্বাদু গুড়ের চাহিদাকে পুঁজি করে মিষ্টির সিড়ার এর সঙ্গে রং মিশিয়ে গুড় তৈরি করে তা বাজারজাত করছে। এর ফলে পেটে ব্যাথা, ডাইরিয়া সহ নানা সমস্যায় ভুকছে স্থানীয় লোকজন ও শিশুদের লিভার ক্যান্সারের মত ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের আলোয়াকুড়ি গ্রামের বৈরাগী পাড়ার বিরু মহন্ত ভাটি’র ছেলে গুড় ব্যবসায়ী দীনো নাথ মহন্ত তার নিজ বাড়িতে ভেজাল গুড় তৈরি করার জন্য মিনি কারখানা করেছেন। এসব চিনির সিড়ার সাথে রং মেশানো ভেজাল গুড় এখন উপজেলার হাটবাজারে সয়লাব হয়ে গেছে এবং এ গুড় চলে যাচ্ছে রংপুর নগরীসহ আশেপাশের বাজারগুলোতে। ক্রেতাদের অভিযোগ নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে এ গুড় তৈরি করা হচ্ছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চিনির চেয়ে মিষ্টির সিড়ার দাম কম হওয়ায় গুড়ে রং মেশাচ্ছে। চিনি কাড়াইয়ে জাল দেয়ার পর তার কালো ফ্যানা তৈরী হয়৷ এর পর চিনিগুলো রসের সঙ্গে রং মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে হাইড্রোজ ও ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রং উজ্জ্বল করা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা অবধি বাড়িতে মিষ্টরি সিড়ার সঙ্গে নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন এবং পরদিন সকালে ভ্যান/অটো রিক্সা ভর্তি করে তা বাজারজাত করছেন। শুধু দিনো নাথ মহন্ত নয় একই এলাকার সুমন,গৌরাঙ্গ, পলাশ সহ আরো অনেকেই গুড় তৈরী করে জিলাপি, মলা, বাতাশা,খুরমা,আচারের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনির সিড়ার দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অপরদিকে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে। প্রতি কেজি চিনির সিড়া থেকে প্রায় দেড় কেজি গুড় তৈরি হয়। সে হিসেবে মিষ্টির সিড়ার সাথে রং মিশিয়ে প্রতি কেজি গুড়ে প্রায় ৬০ টাকার বেশি লাভ পাচ্ছেন।
সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের আলোয়াকুড়ি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন,শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে মিষ্টির সিড়া কিনে এনে কড়াইে আগুনে জাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। সে জন্যই অধিকাংশ চিনি আগুনে তাপ দিয়ে ময়লা কালো ফ্যানায় রং মিশিয়ে গুড় তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছেন। চিনির সিড়া মিশ্রিত গুড় শক্ত এবং কেমিক্যালের কারণে উজ্জ্বল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, চিনির সাথে রং মিশিয়ে আগুনে জাল দিলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটে র পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর নাহার বেগম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই তবে কারো বিরুদ্ধে ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।